top of page
Search

ভূ গোলোক → ভূগোল : নীলাক্ষী অধিকারী

  • Writer: Jana Ajana
    Jana Ajana
  • Aug 28, 2020
  • 4 min read

Updated: Aug 29, 2020

বিশ্বব্রহ্মাণ্ড পৃথিবী ও তার আনুসাঙ্গিক সৌরজগৎ এবং পৃথিবীর অভ্যন্তর সর্বত্রই মূল চাবিকাঠি হল "ভূগোল" । এখানে ভূগোল শব্দটি দেখে দুটি জিনিস মাথায় আসে 'ভূ' অর্থাৎ 'পৃথিবী' এবং 'গোল' বলতে বোঝায় গোলাকার বিষয়বস্তু, কিন্তু শুধুমাত্র গোলাকার পৃথিবীই ভূগোলের সামগ্রিক বিষয়বস্তু, তা আজ নয় । এক ব্যাপক ও বিস্তৃত বিষয়বস্তু , যার মধ্যে অন্তর্নিহিত রয়েছে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তার যাবতীয় অংশবিশেষ,তাই ভূগোল হল এমনই একটি বিষয়টি যার প্রতিটি শাখায় একটি পারস্পারিক অন্তর সম্পর্ক বিদ্যমান।

ভূ' অর্থাৎ 'পৃথিবী'


প্রাচীনকাল থেকেই আমরা ভূগোল চর্চার অভ্যাস পেয়ে এসেছি । ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান প্রতিটি বিষয়ই ভৌগলিক ইতিহাস তথ্য ভূগোল এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে । ভু বিশ্বের ভৌগোলিক পরিবেশ এবং প্রভাব অন্বেষণ করতে গিয়ে মানুষের মনে প্রথম জেগে উঠেছিল বৈজ্ঞানিক চেতনার। তাই অনেকে ভূগোল বিষয়টিকে বিজ্ঞানের জননী ( Geography is the “mother of all sciences) বলে অভিহিত করেছেন। প্রাচীন গ্রীক পণ্ডিত এরাটোসেনীস প্রথম 'জিওগ্রাফি '(Geography) শব্দটি ব্যবহারকরেছিলেন । দুটি গ্রীক শব্দের মিলনে( 'Geo' অর্থাৎ ভূমণ্ডল বা পৃথিবী, এবং 'Graphy' অর্থাৎ বর্ণনা বা লেখা ) তৈরী 'জিওগ্রাফি' অর্থাৎ 'মানুষের আবাস যা এই পৃথিবীর বর্ণনা । পিটার হ্যাগেট (১৯৮১) ভূগোলের সংঙ্ঘা প্রদান করতে গিয়ে বলেছেন, ভূ পৃষ্ঠকে মানবগোষ্ঠীর বসবাসের দেশ হিসাবে যে শাস্ত্র সমীক্ষা করে তা হল ভূগোল । অর্থাৎ আদিম মানুষ যে সময় থেকে পৃথিবী পৃষ্ঠে বসবাস করতে শুরু করেছে সেই সময় থেকেই ভূগোলের সৃষ্টি লগ্ন

'মানুষের আবাস

শুরু হয়েছে । পৃথিবীতে মনব সভ্যতার দীর্ঘ ইতিহাসের প্রতিটি পদক্ষেপে ভূগোল বিষয়কে জানতে হয়েছে ।




ভূগোল বিষয়টিকে খুব সহজে ব্যাখ্যা করতে হলে বলা যায়, যে শাস্ত্র বা বিষয় স্থান ও কাল বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করে তাই হল ভূগোল, অর্থা 'মানুষ কোথায় থাকে'? 'কোথায়' শব্দটি ভূপৃষ্ঠের মানুষের বেছে নেওয়া -বাসস্থান ,দেশ, একদেশীকরণ কে বোঝায় । আবার ভূপৃষ্ঠের উপর যা আছে অতীতেও তা তেমন ছিল কিনা বা ভবিষ্যতে কেমন হবে অর্থাৎ দেশ-কালের (Space and Time )বিষয়গুলি ভূগোল শাস্ত্রে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। আবার এই ভূগোল বিষয়ে দেখা যায় প্রত্যেকটি বিষয় এই ভূগোলের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রেখে এসেছে ,অর্থাৎ আমরা ভূগোলকে "আন্তঃসম্পর্কের বিজ্ঞান" বলেও আখ্যায়িত করতে পারি । আবার ভূগোলকে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের চাবিকাঠি উদ্ধারের একমাত্র পথও‌ বলে থাকতে পারি , অর্থাৎ ভূগোল হল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের জ্ঞান উন্মুক্তকরণের চাবিকাঠি ,যা ব্রহ্মান্ডের জ্ঞানের দ্বার উন্মুক্ত করে নতুন আলোর দিশা দেখাতে পারে ।




প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন ভৌগলিক দার্শনিক ও ভূগোলবীদ ভূগোলের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করে এসেছেন এবং ভূগোল সম্পর্কে তাদের প্রত্যেকের মতামতও ভিন্ন ভিন্ন । কিন্তু ভূগোলকে বিজ্ঞান রূপে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস প্রায় সব ভৌগোলিক দের মধ্যেই দেখা যায়, সব থেকে মজার বিষয় হলো যে ইতিহাস ও ভূগোলের মধ্যে সম্পর্কও ঘনিষ্ঠ , প্রথমে শুনে এটাই মনে হয় যে দুটি ভিন্ন ধারার বিষয় কি করে ঘনিষ্ঠ হয় ? ইতিহাস মানে সেই ভৌগলিক অতীতের ধ্যান-ধারণা, প্রকৃত পক্ষে যাকে বর্তমানে অনুভব করা যায় না, অন্যদিকে ভূগোল একটি বিজ্ঞান ভিত্তিক ধারণা, যাকে বর্তমানে অনুভব করা সম্ভব এবং সঠিক প্রামাণ্য বিষয়েও খুঁজে পাওয়া সম্ভব । তাহলে এই দু'টি বিষয় এক হওয়া টা কি দুর্বোধ্য নয় ? যদি গোড়া থেকে ভূগোল দর্শন সম্পর্কে আলোচনা করা যায় তাহলে দেখা যায় এই বিশাল বৃক্ষের শিকড় এর সাথে ইতিহাসের যোগসুত্র রয়েছে । গ্রীক পন্ডিত হেরোডোটাস যাকে ইতিহাসের জনক বলা হয়ে থাকে , তিনি ইতিহাসের সাথে ভূগোলের চিন্তা কে যুক্ত করেন ।

ভৌগলিক ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভারতের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত ঢোলাভিরা বন্দরের পতন
ভূগোলের সঙ্গে ইতিহাসের সম্পর্ক
ভৌগলিক ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভারতের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত ঢোলাভিরা বন্দরের পতন (সিন্ধু সভ্যতা)

তিনি ইতিহাস ও ভূগোলের যোগসুত্র কে তুলে ধরেছিলেন । তার চিন্তা অনুযায়ী ইতিহাসকে ভূগোলের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে আলোচনা করতে হবে ও ভূগোল কেউ ইতিহাসের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করতে হবে অর্থাৎ এই ইতিহাস ও ভূগোল যেন সেই বৃহৎ বৃক্ষের আলাদা আলাদা শিকড় , তাদেরই পারস্পরিকতায় সেই বৃক্ষটি বেড়ে উঠেছে আপন গতিতে আর এই বৃক্ষের একটি অংশ রূপে গড়ে উঠলো আমাদের ভূগোল বিষয় যার অসংখ্য শাখা-প্রশাখা আজ বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে সুনাম খ্যাতিতে;তাই ভূগোল শাস্ত্র যেন আজ সর্বত্রই পূজিত ।


এখন আলোচনা করা যাক এই শাস্ত্র মূলত কোন কোন বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে -

  1. অবস্থান

  2. সজীব ও নির্জীব উপাদান এর দৈনিক বন্টন

  3. জনসংখ্যা ও জনবসতির আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য ও অবস্থান

  4. ভূমিরূপ পরিবর্তনকারী শক্তির সমূহ

  5. আঞ্চলিক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিষয়ক মানচিত্র

  6. উপগ্রহ চিত্রের বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা

  7. মানচিত্রের উপস্থাপন ও তার বিবিধ ব্যবহার


উপরিউক্ত বিষয়সমূহকে পর্যালোচনা করার জন্য এই শাস্ত্রকে বিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে আন্তঃসম্পর্ক বজায় রাখতে হয় । বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা যেমন ভূতত্ত্ববিদ্যা , জীব বিদ্যা , পদার্থবিদ্যা , রসায়ন বিদ্যা এছাড়াও সমাজ বিজ্ঞানের অন্তর্গত অর্থনীতি, ইতিহাস , রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমাজবিদ্যা , পরিবেশ বিদ্যার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত । মূলত ভূগোল বিষয়টি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বিষয় হিসাবে আসার পর ভূগোলবীদদের মধ্যে এক দ্বিমতের সৃষ্টি হয় । সেই দ্বিমত টা খুব প্রাসঙ্গিক এই বিষয়ে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক ঘটনাবলী ও প্রাকৃতিক বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করে , তেমনি অপরদিকে আবার ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও মানুষজন নিয়ে আলোচনা করে , তাই কিছু ভূগোলবীদ প্রাকৃতিক বিষয়বস্তু নিয়ে আলোকপাত করতে শুরু করেন , অন্যদিকে কিছু ভূগোলবিদ আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন । তাই অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ এবং স্থানকে ভূগোল শাস্ত্রের 'রুটি এবং মাখন' রূপে অভিহিত করা হয় । ভূগোলবিদদের থেকেই ভূগোলকে মূলত দুটি শাখায় বিভক্ত করা হয় - প্রাকৃতিক ভূগোল ও মানবীয় ভূগোল ।


প্রাকৃতিক ভূগোলের অন্তর্গত শাখা গুলি হল -

  • ভূমিরূপ বিদ্যা

  • ভূ গাঠনিক বিদ্যা

  • জলবায়ু বিদ্যা

  • পুরা ভূগোল

  • জীব ভূগোল

  • মৃত্তিকা ভূগোল

  • পরিবেশ ভূগোল ইত্যাদি।


মানবীয় ভূগোলের অন্তর্গত শাখা গুলি হল -

  • পৌর ভূগোল

  • জনবসতি ভূগোল

  • জনসংখ্যা ভূগোল

  • সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভূগোল

  • কৃষি ভূগোল

  • চিকিৎসা ভূগোল

  • রাজনৈতিক ভূগোল

  • ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা

  • পরিবহন ও যোগাযোগ সম্বন্ধীয় ভূগোল

ভৌগোলিক অবস্থান অর্থাৎ পাহাড়-জঙ্গলে  জনবসতি কম
ভৌগোলিক অবস্থান অর্থাৎ পাহাড়-জঙ্গলে জনবসতি কম



এই সমস্ত শাখা গুলি এই বিষয়েকে সমৃদ্ধ করে এসেছে এবং ভূগোল শাস্ত্রের জ্ঞান ভান্ডারকে পরিপূর্ণতা দিয়ে বর্তমানে সমাজ বিজ্ঞানের একটি অন্যতম বিষয় হিসাবে পরিণত করেছে । তাই এই বিষয়ে আজ দেশ-কালের সীমানা ছাড়িয়ে এক অন্যতম আন্তঃসম্পর্ক বিষয় ভিত্তিক, বিষয়ে রূপে সমাদৃত । এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য ষাটের দশক যেমন ভূগোল শাস্ত্রের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় মাত্রিক বিপ্লবের জন্য , তেমনি 1996 সালের ভূগোল শাস্ত্রের আরেকটি মাইলস্টোন সেই সময়ের নেদারল্যান্ডের দি-হেগ শহরে পাঁচটি দেশের কুড়ি জন প্রতিযোগীকে নিয়ে ভূগোল অলিম্পিয়ার্ড শুরু হয় এবং গত বছর 2018 তে 52 টি দেশের প্রায় 200 জন প্রতিযোগী নিয়ে অলিম্পিয়ার্ড সম্পন্ন হয়েছিল । এই প্রতিযোগিতায় ভূগোল বিষয়কে সাফল্যের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে দিয়েছে । বর্তমানে ভূগোলবিদ্যা দেশ-কালের সীমানা ছাড়িয়ে পারস্পরিক মিথোজীবিতার তার ভিত্তিতে সারাদেশ জুড়ে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রয়াসী ।





নীলাক্ষী অধিকারী

ধন্যবাদ:

নীলাক্ষী অধিকারী

nilakshiadhikari1995.na@gmail.com


আপনারাও যদি ভারতীয়, স্থাপত্য ,ভাস্কর্য ,শিল্পকলা, গান ,নাচ, ইতিহাস ,ভূপ্রকৃতি , পরিবেশ , অর্থনীতি সংস্কৃতি ও ভ্রমণ বিষয়ে নিজেদের লেখা পাঠাতে চান তাহলে আমাদের এই ঠিকানায় আপনার লেখা ও ছবি পাঠিয়ে দিন ।


ঠিকানা : janaajana46@gmail.com

 
 
 

Comments


tridibesh_edited.jpg

জানা-অজানা

ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভ্রমণ

Know your history

WEEKLY NEWSLETTER 

Thanks for submitting!

  • https://www.facebook.com/ChhauMaskandPuruliaTourGuide/?ref=pages_you_manage

© 2023 BY Tridebesh Chatterjee. Designed BY CAPTUREGRAPHICS.IN

bottom of page