Part 1 আনাই-জামবাদের(মহাদেব বেড়া) জৈন পুরাকীর্তি
- Jana Ajana
- Aug 24, 2020
- 3 min read
Updated: Aug 25, 2020
পুরুলিয়া জেলার নানান প্রান্তরের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে জৈন স্থাপত্য ও ভাস্কর্য অসাধারণ অনন্য অনেক নমুনা তাদের মধ্যে কিছু এত কিছু আখ্যাত আবার এমন অনেক আছে যেগুলি এখনো পর্যন্ত আমাদের কাছে উপস্থিত হয়নি বা আবিষ্কৃত হয়নি । এখানে পুরুলিয়া জেলার একটি অখ্যাত জৈন পুরাক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করা হলো । এই অখ্যাত জৈন পুরা ক্ষেত্রটির নাম হল "আনাই-জামবাদ" প্রচলিত নাম "মহাদেব বেড়া" ।

পুরুলিয়া শহর থেকে পূর্ব দিকে ১৩ কিলোমিটার দূরে পিন্দড়া (পলাশকলা )গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মাহাদেব বা আনাই-জামবাদ রয়েছে ৬ টি জৈন তীর্থঙ্করের অসাধারণ মূর্তি ।বর্তমানে "শ্রী সরাক জৈন সমিতি খরখরি(?)ধানবাদ একটি মন্দির নির্মাণ করে দিয়েছে যার মধ্যে রয়েছে মূর্তি গুলি । মন্দিরটি একটু নির্জন জায়গা রয়েছে এবং কিছুটা দূরেই বয়ে যাচ্ছে কাঁসাই । আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দেউলের ভাগ্নাংশ যা দেখে অনুমান করা খুব কঠিন নয় যে এখানেও দুই থেকে তিনটি দলের অস্তিত্ব ছিল। এই "আনাই-জামবাদ জৈন পুরাতাত্ত্বিক স্থানটির আনুমানিক সময়কাল ছিল খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে কে সৃষ্টি দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে । ধ্বংসস্তূপের ওপর মাটিচাপা অবস্থায় এটি প্রথম লক্ষ্য করা গিয়েছিল এবং স্থানীয়রা মাটি খুঁড়ে প্রথমে পাঁচটি মূর্তি আবিষ্কার করেন এবং পরে আরো একটি মূর্তি খননের ফলে উঠে আসে । বর্তমানে একটি সিমেন্ট এর একটি বেদির ওপর এই ছটি মূর্তি সাজানো আছে । বাঁদিক থেকে ডানদিকে মূর্তি গুলির বর্ণনা করা হলো ।

প্রথমেই বাঁদিকে চোখে পড়বে " চন্দ্রপ্রভ " ধ্যানরত মূর্তি । ইনি হলেন জৈন ধর্মের অষ্টম তীর্থঙ্কর । ৪৪ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২৪ সেন্টিমিটার প্রস্থ । মূর্তিটি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় পাওয়া যায় । এখন দেখা যাচ্ছে তীর্থঙ্কর পদ্মাসনে(পদ্মের উপর) বসে আছেন এবং তাঁর হাত গুলো ধ্যান মুদ্রায় রয়েছে । পাঁচ স্তম্ভ বিশিষ্ট সিংহাসন এর ওপর যে পদ্মের আসনটি ( মহাম্বুজপিথ ? ) রয়েছে তার ঠিক মাঝখানে রয়েছে চন্দ্রপ্রভ এর লাঞ্ছণ চিহ্ন অর্ধচন্দ্রাকৃতি একটি চাঁদ । তীর্থঙ্করের দুই পাশে রয়েছে দুই চামচ ধারির । এদের মাথায় রয়েছে মুকুট এবং দেহের নিচের অংশে
বস্ত্র রয়েছে । তীর্থঙ্কর মূর্তির কানের লতি গুলো অনেকটাই লম্বা , চুলগুলো কোঁকড়ানো এবং মাথায় রয়েছে একটি ছোট্ট চুলের ঝুটি যাকে "উসনিশা " বলা হয় । মাথার ঠিক পেছনে রয়েছে দেবজ্যোতি( শিরোসিচক্র ) চক্রাকারে। মাথার উপর রয়েছে একটি ছাত্র/ছাতা যেটির কিছুটা অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে । ছত্রের দুই পাশে রয়েছে বিদ্যাধর যুগোল ( পোরি - ভারতে আব্রাহামিক ধর্ম আগমনের পর এই পোরির ধারণা এসেছে ) । সম্পূর্ণ মূর্তিটি কালো রঙের পালিশ করে পাথর দিয়ে তৈরি । মুর্তিটি তৈরীর সময় কাল খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীর ।

এর পর যে মূর্তিটি চোখে পড়বে সেটি হল ঋষভনাথ । জৈন ধর্মের প্রথম তীর্থঙ্কর হলেন আদিনাথ , ঋষভনাথ বা ঋষভদেব । কায়োৎসর্গ মুদ্রা ( সোজা ভাবে দাঁড়নো অবস্থায় ) দাঁড়িয়ে রয়েছেন । মাথায় রয়েছে "জটা-মুকুট"( শিবের মতো আদিনাথেরও মাথায়ও জটা রয়েছে) ও তাঁর চুল কাঁধ পর্যন্ত
নেমে এসেছে । ত্রিরথ সিংহাসনেরউপর পদ্মের উপর তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। ত্রিরথ সিংহাসনের একদম মাঝে রয়েছে ঋষভনাথের লাঞ্ছণ চিহ্ন "ষাঁড়"এই লাঞ্ছণ এর পাশে রয়েছে দুটি সিংহের মূর্তি। ত্রিরথ সিংহাসনের ডানদিকে রয়েছে ভক্ত যুগলের চিত্র যাদের হাত গুলি জোড়া অবস্থায় প্রার্থনারত এবং সিংহাসনের বাঁদিকে রয়েছে আদিনাথ কে উৎসর্গকৃত জিনিস। পায়ের দুই পাশে রয়েছে চামরধারী । এদের মাথায় রয়েছে মুকুট এবং এদের দেহে পোষাক (ধুতি) রয়েছে । তীর্থঙ্করের মাথার পেছনে রয়েছে শিরোসিচক্র । তীর্থঙ্করের দুই পাশে রয়েছে ৭ গ্রহ ও গনেশের প্রতিকী মূর্তি (গ্রহদেবতা ) । তীর্থঙ্কর এর মাত্র এক মাথার একদম উপরে রয়েছে ত্রিস্তরীয় ছাত্র ছাতা এবং এর দুই পাশে রয়েছে বিনাবাদক । মূর্তিটি উচ্চতায় ৬৬ সেন্টিমিটার এবং ২৯ সেন্টিমিটার চওড়া ।
এরপর যে মূর্তিটি চোখে পড়বে সেই মূর্তি টি হল এখানে সবচেয়ে বড় মূর্তি উচ্চতায় 140 সেন্টিমিটার এবং চওড়ায় 57 সেন্টিমিটার । মূর্তিটি 23 তম তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথের । এটি ছিল সম্ভবত দেউল এর প্রধান আরাধ্য দেব । পার্শ্বনাথে মূর্তিটি কায়ৎসর্গ মুদ্রায় দণ্ডায়মান ( সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ) ত্রিরথ

সিংহাসন এর ওপর । ত্রিরত্ন সিংহাসনের পাশ থেকেবেরিয়ে আসছে দুটি নাগ যুগল যাদের হাত গুলি জোড়া অবস্থায় প্রার্থনারত । এদের পাশে রয়েছে দুটি চামর ধারী। মূর্তিটির ভালো করে দেখলে লক্ষ্য করা যাবে যে পায়ের 25 থেকে কুণ্ডল আকৃতি সাপের দেহ উঠে যাচ্ছে একেবারে কাঁধ পর্যন্ত এবং কাঁধের ওপর থেকে মাথার উপর পর্যন্ত রয়েছে সাতটি সাপের ফণা যার দ্বারা তীর্থঙ্কর মস্তক আচ্ছাদিত । এছাড়াও একদম উপরে রয়েছে ত্রিস্তর বিশিষ্ট ছাত্র বা ছাতা । ত্রিস্তরীয় ছাত্রের পাশে রয়েছে বীণা বাদক যুগোল । পার্শ্বনাথের দুই পাশে রয়েছে বারোটি-বারোটি মোট চব্বিশটি তীর্থঙ্করের প্রতিকী মূর্তি । সম্পূর্ণ কাল রঙের মূর্তি ।
এই প্রতিবেদনটিতে আনাই-জামবাদ বা মহাদেব বেড়া তিনটি মূর্তির সম্পূর্ণ বিবরণ দেওয়া হল । এরপরের প্রতিবেদনে আমরা বাকি তিনটি জৈন তীর্থঙ্কর মূর্তির সম্পূর্ণ বিবরণ ও আরো অনেক অজানা বিষয় প্রকাশ করব । আপনারাও যদি ভারতীয়, স্থাপত্য ,ভাস্কর্য শিল্পকলা, গান ,নাচ ইতিহাস সংস্কৃতি ও ভ্রমণ বিষয়ে নিজেদের লেখা পাঠাতে চান তাহলে আমাদের এই ঠিকানায় আপনার লেখা ও ছবি পাঠিয়ে দিন । ঠিকানা : janaajana46@gmail.com.
ধন্যবাদ
Tridbiesh Chatterjee.
*Good morning আনাই-জামবাদ দ্বিতীয় পর্ব । এই জিনিস কোন বই এ নেই*
https://janaajanahistories.wixsite.com/janaajanahistories/post/part-2-আন-ই-জ-মবদ-র-মহ-দ-ব-ব-ড-জ-ন-প-র-ক-র-ত
Good one