পাড়া দেউল Tridibesh Chatterjee
- Jana Ajana
- Aug 17, 2020
- 3 min read
ed with Public







পুরুলিয়া জেলার একটি ব্লক হল পাড়া যা পুরুলিয়া শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই পাড়া ব্লকের অন্তর্গত পাড়া থানার পেছনে ৭০০ মিটার মধ্যেই রয়েছে পুরুলিয়া জেলা তথা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম দেউল মন্দির শৈলীর উৎকৃষ্টতম উদাহরণ "#পাড়া দেউল" । এখানে রয়েছে ২ টি দেউল , যার মধ্যে বাঁ-দিকে হল ইঁটের দেউল এবং ডানদিকের টি হল পাথরের দেউল । ভারতীয় মন্দির স্থাপত্য শৈলীর অন্যতম "নাগড় স্থাপত্য শৈলী" বা "উত্তর ভারতীয় মন্দির শৈলী" আমাদের এই পাড়া দেউলে খুব সুন্দর ভাবে লক্ষ্য করা যায় । পুরুলিয়া জেলায় যে সমস্ত প্রাচীন মন্দির দেখা যায় সেই গুলিকে বলা হয় দেউল এবং পাড়াতে যে দেউল দুটি দেখা যায় সেটি কে বলা হয় "#শিখর দেউল" । পাড়ার দুটি দেউলের সময়কাল আনুমানিক খ্রিস্টীয় #নবম থেকে #দ্বাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে । পুরুলিয়াতে এখন যে শেষ তিনটি ইঁটের দেউল রয়েছে তার মধ্যে একটি এই পাড়াতে অবস্থিত । তাই জায়গাটির গুরুত্ব অনেক বেশি । ইঁটের এই দেউল টির উচ্চতা মোটামুটি 45/৪৬ ফুট তবে আগে এর উচ্চতা আরো বেশি ছিল , কালে অমোঘ নিয়মে ও মানুষের সচেতনতার অভাবে উপরে বেশ কিছুটা অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে । তবে এখনও উপরে যে অংশ রয়েছে তা অত্যন্ত কারুকার্য মন্ডিত । চুন ও ইঁট গুঁড়ার সাহায্যে অনেক নিখুঁত কাজকর্ম চোখে পড়বে ।
দেউল শৈলী অনুযায়ী উপরের অংশটি ছিল গম্বুজাকৃতি এবং এতে #আমলক ( চক্র জাতীয় , #পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দিরের উপর দেখা যায়) , কলস ( কলসী ) এবং পতাকা দণ্ডের অস্তিত্ব ছিল । পাতলা পাতলা ইঁটের তৈরী এই দেউলটিতে চুন ও ইঁটের গুঁড়ি দিয়ে ফুল , লতা-পাতা, দেব-দেবী ও হরতন আকৃতির চৈত্য/ চৈত ( ছোট দেউল এর নকশার অনুকরণে তৈরি , এটি পাড়ার ইঁটের দেউল উপরে দেখা যায় ) এবং বিভিন্ন জ্যামিতিক নকশা খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । দেউলটির ভেতরে বর্তমানে একটি #ষড়ভূজা দেবী মূর্তি রয়েছে । স্থানীয় মানুষ এটিকে দেবী দূর্গা রূপে পূজা করে থাকেন । মূর্তিটি আকারে ছোট এবং গোলাকার পৃষ্ঠের উপর খোদিত । তবে এটি জৈনদের #শাসন-দেবীর মুর্তিও হতে পারে । ইঁটের দেউল ছাড়াও পাথরের যে দেউলটি আছে তার মন্দির শৈলী পুরুলিয়ার দেউল থেকে একটু আলাদা । এটিও শিখর দেউলের অন্তর্গত । এই দেউলটির বিশেষত্ব হল এর উপরের অংশ যে চক্রাকার আমলক টি দেখা যায় সেটি অনেক ছোট , গ্রীবা ও বেকি টিও খুবই ছোট ( পুরুলিয়া শহরের নিকট #ডাবর বলরামপুর বলে একটি গ্রামে এই রকম একটি দেউল রয়েছে )। দেউলটি গায়ে খোদিত রয়েছে নৃত্যরত নরী , যক্ষ-যক্ষিনী, ঘোড়া, পদ্ম , ফুল, চক্র এবং আরও 4 টি অস্পষ্ট নকশা । বেলে পাথর দিয়ে মন্দিরটি তৈরী । এটি জৈন ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল , তবে পরে এটি আবার নির্মাণ করা হয়েছিল ব্রাহ্মণ্য ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা (?) ।
জে ডি বেগলার যখন পাড়াতে আসেন তখন তিনি অনেক গুলি মূর্তি ও ভাস্কর্য দেখতে পেয়েছিলেন , যার মধ্যে একটি ছিল #বীর স্তম্ভ ( বর্তমানে নেই) । 1903 সালে পাথরের দেউলের মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল একটি লক্ষ্মী দেবীর মূর্তি এবং ইঁটের তৈরী দেউলের মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল দশ হাত বিশিষ্ট দেবী দুর্গার মূর্তি । #দীলিপ কুমার চক্রবর্তীর মতে এখানে একটি শিবলিঙ্গ, একটি নটরাজ, একটি উমা-মহেশ্বর মূর্তি সহ আরো কিছু মুর্তি ইঁটের দেউলে কোন এক সময় ছিল । বর্তমানে এটি চণ্ডী মন্দির নামে পরিচিত । তবে ব্রাহ্মণ্য ধর্মে পূর্বে এটি ছিল একটি জৈনদের ধর্মীয় স্থান যার প্রমাণ বহন করে অনেক গুলি #তীর্থঙ্কর মূর্তির ধ্বংসাবশেষ যে গুলো পাড়া দেউল থেকে কিছুটা দুরে কুইরী পাড়ার #রঘুনাথ মন্দিরের লক্ষ্য করা যায় । কথিত আছে পাড়া এক সময় #পঞ্চকোট রাজাদের রাজধানীতে পরিণত হয়েছিল পরবর্তীকালে এই রাজধানী পঞ্চকোট বা পাঁচেট এ স্থানান্তরিত হয় ।
পাড়া দেউল এর স্থাপত্য শৈলীর অসাধারণ । এই ধরণের মন্দির শৈলী খুবই কম সংখ্যায় রয়েছে । আমদের কর্তব্য হল এগুলোর ইতিহাস ও বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা । তা না হলে পুরুলিয়া ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র গুলো কালের অন্তরালে হারিয়ে যাবে । ঠিক যেন #তেলকুপী অদ্বিতীয় দেউল গুলো দামোদর নদের জলে জল সমাধি নিয়েছে ।
বর্তমানে দেউল দুটিকে সংস্কার করার কাজ চলছে ।
ধন্যবাদ
ছবি গুলো দেবায়ণ গোস্বামী বলে আমার এক friend তুলেছিল ।

plz share ...
Comments