পুরুলিয়া জেলার ভূমির ধরন ও তার ব্যবহার : নীলাক্ষী অধিকারী
- Jana Ajana
- Aug 27, 2020
- 3 min read
Updated: Aug 28, 2020
" পাষাণময় যে দেশ, সে দেশে পড়িলে
বীজকুল, শস্য তথা কখনো কি ফলে ?
কিন্তু কত মহানন্দ তুমি মোরে দিলে
হে পুরুল্যে । "
কবির এই বর্ণনায় এই জেলা সম্পর্কে যে ধারণা প্রস্ফুটিত হয় তা হল রুক্ষ শুষ্ক পাষাণময় অঞ্চল, পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাংশে অবস্থিত এই জেলাটি প্রাথমিকভাবে ছোটনাগপুর মালভূমির অংশবিশেষ । যা মূলত গ্রানাইট ও নিসের প্রাচুর্যতার ভরা এক লাল মাটির দেশ । যদি আমরা এই জেলার

পুরাভূত্বাত্ত্বিক তথ্য সম্পর্কে আলোচনা করি তাহলে দেখা যায় এই অঞ্চলের ভূমিরূপ গঠিত হয়েছে প্রায় 400 থেকে 500 কোটি বছর আগে এখানকার ভূতাত্ত্বিক শিলা প্রায় আর্কিয়ান যুগের, যা আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদানের দাঁড়া ক্ষয়প্রাপ্ত হয় বিভিন্ন ভূমিরূপের সৃষ্টি করেছে ।
এই জেলার বেশিরভাগ অংশই আর্কিয়ান যুগের পেনিনসুলা শিল্ড দ্বারা গঠিত এবং এই জেলার উত্তরের কিছুটা অংশ গন্ডোয়ানা সঞ্চয় দ্বারা গঠিত ।

এই জেলার সমস্ত নদীই বর্ষার জলে পুষ্ট যেমন : কংসাবতী, শিলাই, দ্বারকেশ্বর বা ধলাকিশোর , টটকো, কুমারী, সুবর্ণরেখা, জাম ,চাকা, হনুমাথা প্রভৃতি । এইসব নদীর বিভিন্ন শাখা প্রশাখা এখানকার কৃষিকার্য ও জনজীবনে অবদান রেখে এসেছে , যেগুলিকে স্থানীয় ভাষায়

জোঁড় বলা হয় । তবে বর্ষাকাল ব্যতীত এই সমস্ত নদী গুলি শুষ্ক মরু প্রান্তর অথবা কখনো কখনো ওয়েসিস এর মত সূক্ষ্ম সুতার মত রুপালী স্রোত দেখা যায় । তবুও এই কথা বলাবাহুল্য এখানকার
কিঞ্চিৎ কৃষিকার্যকে ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে এই নদী ও তার বুকে গঠিত ড্যাম বা জলাধার গুলি যেন বৃদ্ধের আমানতের সাহায্যে সংসার চালানোর মতো কাজ করে চলেছে ।

পুরুলিয়া জেলার ভূমির ধরন : - পুরুলিয়া জেলার মোট ভৌগোলিক অঞ্চলের পরিমাণ ৬২৫.৫৫ হেক্টর । এরমধ্যে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ৪২৮.৩৬ হেক্টর । এখানকার কৃষিজমিকে মোট চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা : টাঁড়( Tarr) বা গোঁড়া( Gora ) , বাই (Baid), বহাল (Bahal) , কানালী (Canali) ।
গোঁড়া বা টাঁড় জমি প্রায় ৩০% অংশ জুড়ে অবস্থান করছে । এই জমিটি খুবই নিচু যা বড় দানা যুক্ত অনুর্বর মৃত্তিকা দ্বারা গঠিত । এই মৃত্তিকায় আর্দ্রতার পরিমাণ খুব কম থাকায় কৃষিকার্য সম্ভবপর নয় ।

এই অঞ্চলের উঁচু জমি গুলিকে স্থানীয় ভাষায় বাইদ জমি বলা হয়ে থাকে। মোট জমির প্রায় ৩০ শতাংশ বাইদ জমির অন্তর্গত । এই জমিতে বড় বড় দানা যুক্ত পলি মাটি দেখা যায়, যাতে আর্দ্রতার

পরিমাণ খুবই কম । এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত ব্যতীত কৃষিকার্য সম্ভবপর নয় ।
নিচু জমি গুলিকে বহাল বলা হয়, এই জমি গুলি খুব সূক্ষ্ম

দানা সমৃদ্ধ পলি মৃত্তিকা দ্বারা গঠিত ,তবে এই মাটিতে
কাদার পরিমাণ ও আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি মোট জমির কুড়ি শতাংশ জমি অন্তর্গত এখানে সারা বছরই কৃষিকার্য করা সম্ভব ।
মৃদু ঢাল যুক্ত জমি গুলি কানালী নামে পরিচিত ।প্রায় ২০ শতাংশ অংশ জুড়ে এই জমি বিদ্যমান রয়েছে। এখানে খুব সূক্ষ্ম দানা যুক্ত হলুদ পলি মাটি দেখা যায় । এই মাটি খুব একটা দৃঢ় সংঘবদ্ধ নয় ।

মাটিতে জলের প্রবাহ শুধুমাত্র বর্ষা কালই দেখা যায় । এই জমিতে কৃষি কাজ সারা বছরই সম্ভবপর , তবে জলসেচের সাহায্যের প্রয়োজন ।

এ ছাড়াও স্থানীয় ভাষায় জনবসতি যুক্ত স্থান গুলিকে বাড়ি(Buri) জমি বলা হয়ে থাকে এই জমিগুলোতে
জলসেচ ছাড়া কৃষিকার্য করা সম্ভব নয় ।
ঋতু অনুসারে কৃষিকার্যে ভূমির ব্যবহার : - ভূমির ব্যবহার বা land-use বলতে সাধারণ ভাষায় আমরা বুঝি একটি ভূমির বিভিন্ন অংশকে কী কী কাজে ব্যবহার করা হয় । জলবায়ুর বিচারে আমরা এখানকার কৃষিকার্য কে তিন ভাগে বিভক্ত করতে পারি -
১। বর্ষার পূর্বে কৃষি কাজের ধরন ও জমির ব্যবহার : বর্ষাকালের পূর্বে টাঁড় জমি গুলি পশুচারণ ক্ষেত্র রূপে ব্যাবহৃত হয় এবং বাইদ ও কানালী জমি গুলি যে কোন কাজে ব্যাবহৃত হয় । শুধুমাত্র বহাল জমিতে কিছু শাক সবজির চাষ করা হয়ে থাকে । এই গ্রীষ্ম বা বর্ষার পূর্ব সময়ে জেলায় সূর্যের প্রখর রোদে সব কিছু যেন শুষ্ক উজাড় মরু প্রান্তে পরিণত হয় ।
২। বর্ষাকালে ভূমির ব্যবহার : বর্ষাকালে গোঁড়া বা টাঁড় জমি গুলি পশুচারণ ক্ষেত্র রূপে ব্যবহৃত হয় , অন্যদিকে বাইদ, কানালী ,বহাল জমি গুলিতে ধানের চাষ বিশেষত আমন ধানের চাষ করা হয়ে থাকে । বাড়ি জমি গুলোতে অনেক সময় সবজি , ধান ও আমের চাষ করা হয়ে থাকে ।
৩। বর্ষাকালের পরবর্তী সময় : এই সময় কানালী জমি গুলিতে রবি শস্য চাষ করা হয়ে থাকে । যেমন আলু সরিষা, পেঁয়াজ ইত্যাদি এবং বাড়ি জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি বেগুন, টমেটো ইত্যাদি শাক সবজির চাষ হয়ে থাকে ।
তবে বর্তমান সময়ে কৃষি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির কিছুটা উন্নতির ফলে এই সমস্ত ভূমির ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে আবার অনেক ক্ষেত্রে এক ফসলী জমি গুলিকে দো ফসলীও করে তোলা হচ্ছে । তবে সামগ্রিক বিচারে এই জেলার কৃষি ক্ষেত্রে যথেষ্ট পশ্চাদপদ ।

ধন্যবাদ:
নীলাক্ষী অধিকারী
nilakshiadhikari1995.na@gmail.com
আপনারাও যদি ভারতীয়, স্থাপত্য ,ভাস্কর্য ,শিল্পকলা, গান ,নাচ, ইতিহাস ,ভূপ্রকৃতি , পরিবেশ , অর্থনীতি সংস্কৃতি ও ভ্রমণ বিষয়ে নিজেদের লেখা পাঠাতে চান তাহলে আমাদের এই ঠিকানায় আপনার লেখা ও ছবি পাঠিয়ে দিন ।
ঠিকানা : janaajana46@gmail.com
Comments