রাবণছায়া Tridibesh Chatterjee
- Jana Ajana
- Aug 18, 2020
- 3 min read
সাধারণ পর্যটকদের মনে তথা পর্যটন মানচিত্রে এই রাবণছায়ার স্থান নেই বললেই চলে । স্থানটির পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে " সীতানদী" । এখানে রয়েছে প্রচুর ছোট ছোট টিলা যেগুলি দেখতে অনেকটা বিশালাকৃতি শিবলিঙ্গের মতো ।

রাবণছায়া উড়িষ্যা রাজ্যের কেনদুজহার জেলার অবস্থিত । জায়গাটি জনমানব শূন্য নির্জন প্রকৃতির , চারিদিকে রয়েছে ছোট-বড় বিভিন্ন প্রকার গাছ তার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত গাছ হল শাল এবং পলাশ । বিভিন্ন আকারের ও ধরনের গ্রানাইটের তৈরি ছোট ছোট টিলা রয়েছে এখানে । এক কথায় বলতে গেলে এই রাবণছায়ার পরিবেশ হল খুবই শান্ত ও মনোরম প্রকৃতির ।
যাইহোক এই রাবণছায়া ভ্রমণের আসলে উদ্দেশ্যে আসা যাক । রাবণ ছায়া হলো একটি পুরাতাত্ত্বিক ক্ষেত্র।এই পুরাতাত্ত্বিক ক্ষেত্রটির গুরুত্ব অপরিসীম এখানে একদিকে যেমন রয়েছে গুহাচিত্র তেমনি অন্যদিকে রয়েছে প্রাচীন
তথা আদিম মানুষের বসবাসের বিভিন্ন প্রমাণ । প্রাচীনত্ব দিক থেকে
জায়গাটিতে মনুষ্যবাসের প্রমাণ মেলে আজ থেকে প্রায় 12000 বছর আগে । এখানে প্রচুর পরিমাণে প্যালিওলিথিক টুলস পাওয়া গেছে ।
রাবণছায়া সবথেকে আকর্ষণের বিষয়টি হলো রাবণছায়ার #গুহাচিত্র । চিত্রটি অত্যন্ত
সুন্দর এবং এর সময়কাল মোটামুটি খ্রীষ্টিয় প্রথম থেকে তৃতীয় অথবা চতুর্থ

শতাব্দীর মধ্যে (1st-4th century CE) । ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে একটি শোভাযাত্রা চলেছে যার মধ্যে প্রথমে পাঁচটি অথবা ছয়টি মুখের অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যাবে যারা পায়ে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছে ছবিটি ছবিটি মুখগুলি কিছুটা অস্পষ্ট হলেও একটি ছাড়া বাকি অন্য চারটি মানুষের দেহ প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে বিলুপ্ত হয়েছে । এরপর রয়েছে একটি লাল রঙের ঘোড়া , যার ওপর রয়েছে একজন অশ্বারোহী আর হাতে রয়েছে দণ্ড জাতীয় কিছু । অশ্বারোহীর পরে দেখা যাচ্ছে একটি হাতি যার রং অনেকটা বাদামী রঙের । তবে হাতিরছবিটি খুব স্পষ্ট না হাতিটির ওপরে রয়েছে একজন মাহত ও রাজা । রাজার মুখ এবং মাহতের মুখ অস্পষ্ট । হাতিটির পেছনে রয়েছে আরো একজন পদযাত্রী। এটি হল ছবিটির মূল দৃশ্য এছাড়াও হাতি এবং পথযাত্রীদের কে ঘিরে আরও অনেকগুলি অস্পষ্ট মানবদেহের ও আরেকটি ঘোড়ার অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায় । রাবণছায়ার এই গুহাচিত্রটি গুহার ছাদের( ceiling , not roof ) ওপর এই চিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছে ।

গুহা বলতে আসলে এটি একটি পাথরের বড় খাঁজ । বর্তমান সিঁড়ি যুক্ত মঞ্চ থেকে ছবিটি খুব ভালো ভাবে দেখা যায় । গুহাচিত্রটি তৈরির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভেষজ রঙের ব্যবহার করা হয়েছে । লাল , হলুদ , কাল , সাদা ও সবুজ রঙের ব্যবহার এই ছবিটিতে লক্ষ্য করা যায় । "অজন্তা চিত্রশৈলী " সাথে এই গুহাচিত্রের অনেক ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে , বিশেষত চোখ ,নাক, মুখের ক্ষেত্রে । মিল পাওয়া গেছে ঘোড়া এবং হাতির চিত্র । সম্ভবত এই চিত্রটি বরযাত্রীদের চিত্র। রাবণছায়ার

এই গুহাচিত্রের আনুমানিক
বয়স আনুমানিক খ্রীষ্টিয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে থেকে খ্রীষ্টিয় চতুর্থ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ের । এই গুহা চিত্রের অনেকগুলি ছবি আমি তুলে ছিলাম যে গুলো অবশ্যই দেখবেন ।
গুহাচিত্র ছাড়াও রাবণছায়া পুরাতাত্ত্বিক ক্ষেত্রটির রয়েছে শিলালিপি। রাবণ ছায়ার প্রবেশপথের ডান দিকে কিছু গুলি শিলা মাটিতে পড়ে রয়েছে । এই শিলা গুলির উপর দেখতে পাওয়া যায় প্রাচীন দ্রাবিড়ীয় লিপি , যেগুলির পাঠোদ্ধার এখনও হয়নি । এর ছবিটি অবশ্যই লক্ষ্য করুন - পাথরের উপর খোদাইকৃত লিপি ।

ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ ( archaeological survey of India ) এই রাবণ ছায়ার রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে । রাবণ ছাড়ার বাঁদিকে একটি পাহাড়ে গুহাতে প্রাচীন মানুষের বসবাসের প্রচুর নমুনা এখনও পড়ে রয়েছে । পোড়ামাটির টুকরো , বিভিন্ন টেরাকোটার , রান্নাঘর , যজ্ঞের স্থান ইত্যাদি লক্ষ্য করা যায় । পোড়ামাটির ইঁটেরও অস্তিত্ব রয়েছে এখানে ।
যখন মানুষ গৃহ নির্মাণ করতে শেখেনি তখন গুহাবাসী মানুষ কিভাবে তাদের জীবনযাপন করত তার সম্পূর্ণ পাথুরে উদাহরণ এই রাবণছায়াতে বর্তমান ।
এছাড়াও এখানে একটি শিবলিঙ্গ পাওয়া যায় যার চারদিকে ভগবান শিবের মুখ খোদাই করা রয়েছে এবং এর পেছনে রয়েছে একটি হাঁতির ভগ্ন প্রায় মুর্তি ।

রাবণ ছায়ার প্রবেশপথে একটি ছোট টিলা লক্ষ্য করা যায় স্থানীয়রা এটিকে সীতা-মাতার গহনার সিন্দুক বলে থাকে ।
লোককথা অনুযায়ী সীতা হরণের সময় রাবণের ছায়া এইখানে পড়েছিল তাই স্থানটির রাবণছায়া বলে পরিচিত ।
রাবণছায়া ছাড় কিছু দূরেই রয়েছে সিতাবিনজি , এটিও একটি দর্শনীয় স্থান । লোককথা অনুযায়ী রামায়ণে শ্রী-রাম সীতাকে ত্যাগ করার পর সীতা এই স্থানে বসবাস করেন এবং তার দুই পুত্র লব এবং কুসকে জন্ম দেন । ছোট্ট পাহাড়ের উপর মন্দির রয়েছে যেখানে প্রতিদিন পূজার্চনা হয়ে থাকে ।
উড়িষ্যা এবং ঝাড়খণ্ড সীমান্তে অবস্থিত এই স্থানটি অত্যন্ত সুন্দর এবং আকর্ষণীয় ।
3-4 দিনের ছুটি কাটানোর জন্য অত্যন্ত উপযোগী জায়গা রাবণছায়া ও সীতাবিনজি , যেখানে আপনি খুঁজে পাবেন ভারতের প্রাচীন ইতিহাসের নানান অজানা তথ্য যেগুলি আপনি সহজে কোন বই-এ পাবেন না ।
সিমলিপাল নেশনাল পার্ক, চাঁদীপুর (DRDO) হল আরও কিছু দর্শনীয় স্থান যেগুলি সীতিবিনজি ও রাবণছায়া থেকে খুব কাছেই ।
ধন্যবাদ













Very informative