ইতিহাসে কাল গণনা : সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
- Jana Ajana
- Sep 2, 2020
- 2 min read
আমরা সবাই বুঝি ইতিহাসে কাল গণনার ব্যাবহার অপরিহার্য। ঐতিহাসিক যে কোনো ঘটনাতে কাল বা সময় এর উল্লেখ থাকবে। তবে এই সময় গণনার উল্লেখ সময় ভেদে এবং কাল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
↑ আগের প্রতিবেদন দেখুন ↑

যদি প্রাচীন মিশরীয় দের কাল নিয়ে আলোচনা করি তবে দেখব তারা তারা নীল নদের প্লাবন, পূর্ণিমা, অমাবস্যা ইত্যদি দেখে কালক্রম ঠিক করতো। সঠিক কালক্রম প্রচেষ্টায় তারা খ্রিস্ট পূর্ব 4226 এ সৌর বছর গণনা প্রবর্তন করেন।
গ্রিকরা কালক্রম ঠিক করার জন্য অলিম্পিক খেলার উপর নির্ভর করত। খ্রিস্ট পূর্ব 776 এ প্রথম অলিম্পিক খেলা হয়। প্রতি চার বছর অন্তর এই খেলা হয়। গ্রিক ঐতিহাসিক রা এর পর থেকে সময় নির্ণয় করার জন্য প্রথম অলিম্পিক, দ্বিতীয় অলিম্পিক এইভাবে বলত।
বর্তমান বিশ্বে আন্তর্জাতিক ভাবে সর্বত্র খ্রিস্টান কালক্রম ব্যবহৃত হয়। সংক্ষিপ্ত আকারে এর প্রকাশ হল AD এবং BC দিয়ে। যীশু খ্রিস্ট সর্বপ্রথম তাঁর বাণী প্রচার এর জন্য প্রাচীন ফিলিস্তিনের নাজারেথ নামক জায়গায় জনসম্মুখে আবির্ভূত হন। বিশ্ব ইতিহাসে বিশেষ করে খ্রিস্টান দের জন্য দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খ্রিস্টান ঐতিহাসিক রা যীশুর এই আবির্ভাব কে কেন্দ্রবিন্দু ধরে মানব ইতিহাস কে দু ভাগে ভাগ করেন। এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার পূর্বের ঘটনা খ্রিস্ট পূর্ব যা BC বা before the Christ দ্বারা নির্দেশ করা হয়। পরবর্তী ঘটনা কে বলে AD যা দুটি ল্যাটিন শব্দ Anno Domini নিয়ে তৈরি। যার ইংরেজি অর্থ হল In the year of Lord বা আমাদের প্রভুর বছর। BC গণনার সময় সব সময় পিছিয়ে গণনা করতে হয় আর AD গণনা করার সময় সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়।
মুসলিম জন গোষ্ঠী হিজরী সময় গণনার জন্য হিজরী সাল ব্যবহার করে। যার ইংরেজি শব্দ হলো Migration. হজরত মহম্মদ 622 খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে মক্কা থেকে মদিনায় দেশান্তরী হন। সেই দিনকে নির্দেশ করে হিজরী সাল গণনা করা হয়। মুসলিম সমাজের সব রকম ধর্ম কর্ম এই হিজরী সাল হিসাবে গণনা করা হয়।

আমরা বাঙালিরা বঙ্গাব্দ ব্যবহার করি। মহারাজ শশাঙ্ক তাঁর রাজত্বকালের সূচনাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সূর্য সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বঙ্গাব্দ প্রচলন করেন। সাল 594 এর 12 এপ্রিল সোমবার সূর্যোদয় কাল হল বঙ্গাব্দ এর আদি বিন্দু। ইদানিং কিছু ঐতিহাসিক ,গবেষক এ ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করেন। তাঁরা বলেন বঙ্গাব্দ এর প্রচলন করেন মহামতি আকবর। তিনি 1584 তে এর প্রচলন করেন। যদিও গণনা শুরু করা হয় 1556 এর 5 ই নভেম্বর থেকে অর্থাৎ যেদিন আকবর হিমু কে পরাজিত করে সিংহাসনে আরোহন করেন।
এছাড়াও ভারতীয় কাল নির্ণয়ে প্রচলিত রয়েছে শকাব্দ । তবে শকাব্দ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে অনেক পন্ডিত মনে করেন শকাব্দের প্রচলন ঘটে খ্রীষ্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দ অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৩৫০০ বছর আগে । কারণ প্রাচীন বৌদ্ধ , জৈন এবং হিন্দু লেখনীতে এই শকাব্দের ব্যবহার হয়েছিল। আবার অনেক পন্ডিত মনে করেন শকাব্দের সময়কাল হল ৭৮ খ্রীষ্টাব্দ ।
শকাব্দ ছাড়াও ভারতে প্রচলিত রয়েছে গুপ্তাব্দ এর ব্যবহার । খ্রীষ্টয় একাদশ শতাব্দীতে আল বিরুনীর বর্ণনা দাও উল্লেখ রয়েছে ।৩১৮-৩১৯ খ্রীষ্টাব্দে গুপ্ত সম্রাট প্রথম চন্দ্রগুপ্ত এই সময়কালে সূচনা করেছিলেন যা আজও বর্তমান । আজও গুপ্ত পঞ্জিকা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ।

ধন্যবাদ : সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
আপনারাও যদি ভারতীয়, স্থাপত্য ,ভাস্কর্য ,শিল্পকলা, গান ,নাচ, ইতিহাস ,ভূপ্রকৃতি , পরিবেশ , অর্থনীতি সংস্কৃতি ও ভ্রমণ বিষয়ে নিজেদের লেখা পাঠাতে চান তাহলে আমাদের এই ঠিকানায় আপনার লেখা ও ছবি পাঠিয়ে দিন ।
ঠিকানা : janaajana46@gmail.com
Comments