আমাদের গ্রহের নাম পৃথিবী কেন ?
- Jana Ajana
- Sep 6, 2020
- 3 min read
বাংলা, হিন্দি বা ভারতীয় অন্য যেকোন ভাষা গোষ্ঠীতে আমাদের গ্রহের নাম পৃথিবী হল কেন তা কোনদিন ভেবে দেখেছেন ? আজকের প্রতিবেদনে আমরা প্রকাশ করছি আমাদের গ্রহের নাম পৃথিবী কেন ? { ভূ গোলোক → ভূগোল , click here

পৃথিবী শব্দটি একটি সংস্কৃত শব্দ । সংস্কৃত অনেক প্রাচীন ভাষা এবং ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর এক অন্যতম ভাষা । ঋকবেদের মন্ত্র তথা অন্যান্য বেদ ,উপনিষদ, পূরাণ ইত্যাদিরও ভাষা সংস্কৃত । ঋকবেদে আমরা উল্লেখ পাই পৃথিবী মাতা যার স্বামীর নাম "দায়ুস পিতা" । এছাড়াও আমাদের গ্রহটিকে ভারতীয় ধর্মীয় পুস্তক গুলোতে উল্লেখ করেছে ধরতি মাতা, ভূদেবী ,ভূমি ,ধরিত্রী ইত্যাদি নামে । কিন্তু পৃথিবীর নামের ব্যাখ্যা সেখানে নেই পৃথিবী নামের ব্যাখ্যা আমরা পায় - ভগবত পুরাণ , বিষ্ণুপুরাণ, বরাহ পুরাণে এছাড়াও মহাভারত , রামায়ণেও পৃথিবী নাম করণের কাহিনী রয়েছে ।

ভগবত পুরাণ ও বিষ্ণুপূরাণে উল্লেখ আছে একজন রাজার কথা যার নাম 'ভেনা' ।তিনি ছিলেন একজন অত্যাচারী রাজা যে বৈদিক নিয়মগুলি পালন করত না । সেই সময়ে প্রাকৃতিক সম্পদ অর্থাৎ নদী-পুকুররের জল, বনভূমি, খনিজ পদার্থ যেমন কয়লা , নুন, অভ্র , ধাতুর মধ্যে সোনা, রূপা , লোহা , তামা ইত্যাদি পদার্থ গুলিকে 'ভেনা' যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করতে থাকে যার, ফলে বনভূমি তথা পরিবেশ এবং প্রকৃতির ক্ষতি হতে থাকে। আপনারা সবাই জানেন যে হিন্দু ধর্মে বা ভারতীয় সনাতন ধর্মে প্রকৃতির গুরুত্ব অপরিসীম আমরা প্রকৃতির পূজা করি তথা প্রকৃতিতে মায়ের আসনে বসিয়ে থাকি । কিন্তু যখন একজন রাজা তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রাকৃতিক সম্পদ ও প্রকৃতির ক্ষতি করছে, তা দেখে ঋষি তথা সাধক গণ রাজা ভেনার উপর ত্রদ্ধ হন এবং একটি মন্ত্রপূত ঘাসের দ্বারা রাজা ভেনাকে তাঁরা হত্যা করেন ।

ঋষিরা বুঝতে পারেন যে রাজা ছাড়া রাজ্যশাসন কখনোই সম্ভব নয় তাই তাঁরা রাজার মৃত দেহটিকে শুদ্ধিকরণ এর মাধ্যমে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেন এবং সৃষ্টি হয় এক নতুন রাজার যার নাম তারা দিয়েছিলেন পৃথু । রাজা পৃথুকে বিষ্ণুর অবতার হিসেবে অনেকে মনে করে থাকেন ।
মৎস্যপুরাণ এ উল্লেখিত 'মনু 'কে প্রথম মানুষ হিসাবে ধরা হয় যার মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ জেগেছিল যিনি মৎসান্যায় বা জঙ্গল রাজ থেকে নিজেকে আলাদা করেছিলেন । তাকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে দেখানো হয়েছে আমাদের ধর্মীয় গ্রন্থ গুলিতে । এরপর যাকে আদর্শ হিসেবে দেখানো হয়েছে তিনি হলেন এই পৃথু যিনি প্রকৃতি আর সংস্কৃতির মধ্যে সামঞ্জস্য স্থাপন করেছিলেন। ভাগবত পুরাণে উল্লেখ আছে পৃথু যখন প্রকৃতিকে সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত করছেন অর্থাৎ বনভূমি কেটে কৃষিক্ষেত্রে তৈরি হচ্ছে , নদী থেকে খাল কাটা হচ্ছে, নদীর উপর বাঁধ তৈরি হচ্ছে এবং খনিজ সম্পদ গুলিকে মানুষের স্বার্থে ব্যবহার করছেন , তখন ভূদেবী পৃথু এবং মনুষ্য সমাজের প্রতি রুষ্ট হচ্ছেন এবং গরুর রূপ ধারণ করে তিনি চলে যাচ্ছেন ।

গরুর দুধ কে এখানে রূপক হিসেবে প্রাকৃতিক সম্পদ কে নির্দেশিত করা হয়েছে । দুধ যেমন একজন বাচ্চার কাছে জীবনধারণের বা খিদে মেটানোর একমাত্র উপায় । ঠিক তেমনি ভাবে ভূদেবীর প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহার করে মানুষ সংস্কৃতির নির্মাণ করে এবং সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে বেঁচে থাকে। ভূদেবী গরুর রূপ ধারণ করেন এবং তার দুধ মানুষদের দিতে অস্বীকার করেন। রাজা পৃথু তার কাছে অনুরোধ জানান যাতে তিনি তার ক্রোধ ত্যাগ করেন এবং মনুষ্য সমাজের প্রতিপালন করেন । কিন্তু ভূদেবী তা করতে অস্বীকার করেন ফলে রাজা পৃথু তার তীর-ধনুক উঁচিয়ে ভূদেবী কে আক্রমণের হুমকি দিলে ভূদেবী কিছুটা শান্ত হোন এবং রাজা পৃথু কে প্রশ্ন করেন - মনুষ্য জাতি অদূর ভবিষ্যতে আমার সম্পদের ( দুধের ) অপচয় বা অপব্যবহার অথবা ভূদেবী উপর অত্যাচার করবে না , তার কি যুক্তি আছে !? তখন রাজা ভূদেবী কে আশ্বস্ত করেন যে আমি (পৃথু) ভবিষ্যতে যাতে ভূদবীর উপর কোন প্রকার অত্যাচার না হয় সেই দিকে নজর রাখবে এবং ভূদেবীকে রক্ষা করবে । ভূদেবীর রক্ষাকর্তা হিসেবে পৃথু পরিচিত হন । রাজা পৃথুর নাম অনুসারে আমাদের গ্রহ নাম হয় পৃথিবী ।

পৃথু কে প্রথম আদর্শ রাজা বলা হয়ে থাকে। তিনি যেমন একদিকে সংস্কৃতির নির্মাণ করেছিলেন , ঠিক তেমনি ভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ গুলিও সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করেছিলেন । এই কাহিনী থেকেই বোঝা যায় যে হিন্দু ধর্মে গরুকে এত পবিত্র কেন , কারণ পৃথিবী বা ভূদেবী গরুর রূপ ধারণ করেছিলেন।
ধন্যবাদ
ত্রিদিবেশ চ্যাটার্জ্জী

Khub sunder