কলিঙ্গরাজ খারবেল ও হাতিগুম্ফা শিলালেখ । :সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
- Jana Ajana
- Sep 7, 2020
- 3 min read
মানব সভ্যতা ও তার প্রাচীন ইতিহাস জানার জন্য শিলালেখ এর গুরুত্ব সর্বাধিক। প্রাচীন কালের রাজারা তাদের কর্মকাণ্ড বিভিন্ন শিলা গাত্রে উৎকীর্ণ করে রাখতেন। বর্তমান সময়ে আমরা সেই সমস্ত শিলালেখ দেখে তা পাঠোদ্ধার করে সেই সময়কার ইতিহাস নির্মাণ করার চেষ্টা করি। তথ্য যত বেশি পাওয়া যাবে সেই সময়ের ইতিহাস নির্মাণে ভুল হবার সম্ভাবনা তত কম হবে। সেই রকম একটি শিলালেখ হল কলিঙ্গরাজ খারবেলের হাতিগুম্ফা শিলালিপি।
এর আগে আমরা অশোকের প্রথম< , অশোকের দ্বিতীয়<, লুম্বিনী শিলালিপি সম্পর্কে আলোচনা করেছি । click here

1820 সালে স্টারলিং ভুবনেশ্বর এর কাছে উদয়গিরি পর্বত এর একটি গুহা থেকে এই শিলালিপি আবিষ্কার করেন। এই লিপিতে 17 টি পংক্তি আছে। এটি মধ্য পশ্চিম প্রকৃত ভাষায় এবং ব্রাহ্মী হরফ এ লেখা। জেমস প্রিন্সেপ এবং রাজেন্দ্রলাল মিত্র এই লিপির পাঠোদ্ধার করেন। তাঁদের অনুবাদ দেখে মনে হয় ''অরা'' নামক কোনো সম্রাট এই লিপি উৎকীর্ণ করান। তাঁরা ভেবেছিলেন ''অরা'' ছিলেন অশোক পূর্ববর্তী কোনো সম্রাট। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ভগবানদাস ইন্দ্রজী এই লিপির নির্ভুল অনুবাদ করেন। তিনি প্রমান করেন ''অর'' নামক যে সম্রাট এর কথা এখানে বলা হচ্ছে তাঁর নাম আসলে ''খারবেল''। জেমস প্রিন্সেপ এবং রাজেন্দ্রলাল মিত্র - লিপির একটি লাইন যেখানে লেখা আছে- ''অর নন্দ রাজার প্রাসাদ নির্মূল করেন'', এটা দেখে মনে করেছিলেন এই লিপি মোর্য পূর্ববর্তী যুগের। কিন্তু পরবর্তী সময়ে লিপির সঠিক পাঠোদ্ধার এ এটা বোঝা যায় যে কলিঙ্গরাজ যার সময়ে মগধ আক্রমন করেন সেই মগধ সম্রাট এর নাম ''বহ সতি মিত''।

এই শিলালিপিতে তিনজন রাজার নাম পাওয়া যায়- সাতকর্নী, বহ-সতি-মিত এবং নন্দরাজ। এদের যে কোনো একজনের সময়কাল জানতে পারলে আমরা খারবেল এর সময়কাল জানতে পারব। এই লিপির 17 টি পংক্তি র মধ্যে তিনটি পংক্তি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রথমত - তৃতীয় পংক্তি তে আছে মহারাজ 'সাতকর্নী' কে তিনি বহুসংখ্যক রথ ,হস্তী ,অশ্ব ইত্যাদি বাহিনী দ্বারা পশ্চিমে প্রতিহত করেন।
দ্বিতীয়ত- ত্রয়োদশ পংক্তিতে আছে মহারাজ 'বহ-সতি-মিত' কে, 'খারবেল' পদানত করেন এবং পবিত্র সিংহাসন ফিরিয়ে আনেন।
তৃতীয়ত- ষষ্ঠ পংক্তি তে বলা হয়েছে 103 বছর পূর্বে নন্দরাজ যে খাল খনন করেন ,'খারবেল' তা সংস্কার করেন। তিনটি পংক্তি যদি আমরা ভালো ভাবে দেখি তাহলে বুঝতে পারব যে এই পংক্তি তে যে নন্দ রাজ এর কথা বলা হয়েছে তা সম্রাট অশোক ছাড়া কেউ না। অশোকেই প্রথম সম্রাট যিনি বুদ্ধদেবের
[ Inscribed Relic Casket বা ভগবান বুদ্ধের এই অস্থির পাত্র ] (567-486 BC) ও মহাবীরের (540- 468 BC) পরবর্তীকালে কলিঙ্গের চেদিরাজকে পরাজিত করেন। সুতরাং তাঁর পক্ষেই কোনো পবিত্র সিংহাসন কলিঙ্গ থেকে মগধ নিয়ে যাওয়া সম্ভব। অন্য কারো পক্ষে না। রাজা খারবেল তাঁর ত্রয়োদশ পংক্তি তে মগধ রাজ কে হারিয়ে সেই পবিত্র সিংহাসন ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন। এর থেকে বোঝা যায় খারবেল ছিলেন অশোক পরবর্তী যুগের কোনো সম্রাট।

সম্রাট অশোকেই কলিঙ্গ জয়ের পরে হাতিগুম্ফা শিলালেখে যে খালটির কথা বলা আছে তা খনন করান। সম্রাট অশোক কলিঙ্গ জয়ের পর 257 BC তে ধউলি ও ঝাওগাদা য় দুটি শিলালেখ স্থাপন করেন।
এই দুটি ঘটনা প্রায় একই সাথেই ঘটে। রাজা খারবেলের হাতিগুম্ফা শিলালেখের ষষ্ঠ পংক্তি তে বলা আছে খাল খনন এর 103 বছর পর মহারাজ খারবেল তা সংস্কার করেন। এখন যদি আমরা একটু গণনা করি তাহলে দেখবো (257-103)=154 BC হল হাতিগুম্ফা র সময়কাল। ঐতিহাসিক রা আরো কিছু সুক্ষ গণনা করে সময়কাল ঠিক করেছেন 147 BC ।

যদিও কোনো কোনো ঐতিহাসিক চেদি রাজ খারবেল কে কলিঙ্গের চেদি বংশের তৃতীয় সম্রাট বলে মনে করেন না। তবে যাই হোক খারবেলের এই হাতিগুম্ফা শিলালিপি ভারত ইতিহাস রচনার এক অমূল্য উপাদান।
ধন্যবাদ : সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়

ঠিকানা : janaajana46@gmail.com
Comments